Add

Smiley face

একটি শিক্ষ্যনীয় গল্প (মতির হার) আপনিয় কাততে বাদ্ধ হবেন।



একটি শিক্ষ্যনীয় গল্প  (মতির হার)

একটি শিক্ষ্যনীয় গল্প  (মতির হার)

_______________________________________________________________________________________________________________________
কাজী আবু বকর মুহম্মাদ আব্দুল বাকী আনসারী (রাযিআল্লাহু আনহু)বলেনঃআমি মক্কা মুকাররামায় অবস্থান করতাম।একদা আমার খুব ক্ষুদা পেল,কিন্তু এমন কোন কিছু পাচ্ছিলাম না যা দিয়ে এ ভীষন ক্ষুধা নিবারন করব।এমতাবস্থায় আমি একটি রেশমী পড়ে পেলাম।যার মুখ বন্ধ করা ছিল একটি রেশমী সুতা দিয়ে।আমি নিয়ে ঘরে চলে আসলাম।যখন ব্যাগ খুললাম দেখলাম ভেতরে মতির খুব সুন্দর একটি হার।ইতিপূর্বে আমার জীবনে কখনো এত সুন্দর দেখিনাই।ব্যাগ ঘরে রেখে বাইরে এসে দেখলাম এক বৃদ্ধলোক পাচশত দিনার হাতে নিয়ে ঘোষনা দিচ্ছে যে, আমার রেশমী ব্যাগ হারিয়ে গেছে,যার মধ্যে একটি মতির হার ছিল,যে ব্যক্তি তা ফেরত দেবে আমি তাকে পাচশত দিনার পুরস্কার দিব।আমি তার ঘোষনা শুনে মনেমনে বলতে লাগলামঃএটাতো আমার খুবই প্রয়োজন,আমি এর খুবই মুখাপেক্ষী,কিন্তু হারটিতো আমারও নয়।এর উপর আমার কি কোন অধিকার আছে?সর্বাবস্থায় আমার তা ফেরত দেওয়া উচিত।হঠাৎ মনে পড়ল রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) হাদিসঃ
``যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনকিছু ত্যাগ করে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে এররচেয়ে উত্তম প্রতিদান দেন"।
এ হাদিসটি স্মরণ করার পর আমি আমার হিম্মতকে আরো মজবুত করলাম এবং ঘরে গিয়ে ঐ ব্যাগ নিয়ে আসলাম বৃদ্ধ আমাকে ঐ ব্যাগের পরিচয়,ধরন এবং ভিতরের হারে মুতির দানার সংগা এমনকি যে সুতা দিয়ে ব্যাগ বাধা ছিল তারও পরিচয় দিল।তখন আমি ব্যাগটি বৃদ্ধকে দিয়ে দিলাম।
বৃদ্ধ ব্যাগ পেয়ে আমাকে পাচশত দিনার দিতে চাইল,কিন্তু আমি তা নিতে অসম্মতি জানালাম।ব্যাগটা তার মালিকের কাছে পৌছানো আমার দায়িত্ব ছিল,তাই বলে আমি তার কাছ থেকে কোন প্রতিদান গ্রহন করতে পারিনা।
বৃদ্ধ বলল অবশ্যই তা গ্রহন করতে হবে,সে আমার সাথে বারবার জেদ করতে লাগল তা গ্রহনের জন্য, কিন্তু আমি যখন তা গ্রহনে বারবার অসম্মতি জানালাম তখন সে আমাকে ছেড়ে পথ চলতে শুরু করল।
আমার জীবনযাপনের কোন ব্যবস্থাই ছিল না।আমি জীবনযাপনের পাথেয়ের খোজে মক্কা থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করলাম,কিন্তু হঠাৎ করে আমার নৌকা ভেঙ্গে গেল।যাত্রীরা সব ডুবতে লাগল,নৌকার যা জিনিসপত্র ছিল সবই সমুদ্রের খোরাকে পনিণত হল।আশ্চর্যজনক ভাবে নৌকার একটি কাঠ আমার হাতে চলে আসল।আমি সেটাতে বসে গেলাম সমুদ্রের ঢেওয়ের আঘাতে আঘাতে আমি এদিক সেদিক যেতে লাগলাম।আমার কোন জ্ঞানই ছিলনা যে আমি কোথা যাচ্ছি এবং কোথায় আমার ঠিকানা হবে।সমুদ্রের ঢেউ আমাকে এমন এক দ্বীপে পৌছল যেখানে কিছু মানবের আবাস ছিল।আমি দ্বীপে উঠলাম এবং সেখানকার একটি মসজিদে আশ্রয় নিলাম।মসজিদে বসে বসে কোরআন আল কারিম তিলাওয়াত করতেছিলাম,দ্বীপের লোকেরা আমার ক্বিরাত শিনে খুশি হল।আমার আসে পাশে জমা হতে লাগল এবং বলতে লাগল আমাদেরকে এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেউ কুরআন শিখাও।তাই আমি ঐ লোকেদের কোরআন শিখাতে লাগলাম।তারা আমাকে অনেক যত্ন করতে লাগল। 
একদিন মসজিদে পড়ে থাকা কোরআন মাজীদের পাতার ওপর আমার দৃষ্টি পড়ল,আমি তা কুড়িয়ে নিয়ে লেখতে লাগলাম।লোকেরা বললঃতুমি এত সুন্দর লেখতে পার! আমি বললামঃ হ্যা।তারা আমার নিকট আবেদন জানল যে আমাদের বাচ্চাদেরকেউ লিখা-পড়া শিখাও।
এরপর তারা তাদের বাচ্চা ও যুবকদেরকে আমার কাছে পাঠাতে শুরু করল,আমি তাদেরকে লিখা-পড়া শিখাতে লাগলাম।এতে করে আমার অনেক টাকা-পয়সা হতে লাগল এবং এলাকাতেও আমি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে লাগলাম।
কিছুদিন পর এ লোকেরা আমাকে বলতে লাগল যে আমাদের এখানে একজন এতিম মেয়ে আছে,সে অত্যন্ত সতী-সাদবী সুন্দরী, তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কিছু ধন সম্পদও আছে।আমরা চাই তার সাথে তোমার বিয়ের বন্দবস্ত করতে।কিন্তু আমি এতে অসম্মতি জানালাম।তারা বলল না না আমরা তোমাকে বিয়ে করাবই।তারা আমাকে বাধ্য করাল আমি কিছু ভেবে চিন্তে সস্মতি দিলাম।বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে আমার যখন সাক্ষাত হল, আমি দেখতে পেলাম যে সম্পূর্ণ ঐ মতির হারটি যা আমি মক্কায় কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।তা এ মেয়ের গলায় পরিহিত আমি তাক লাগিলে হারের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।লোকেরা বললঃ মোহতারাম আপনি এ মেয়ের দিকে না তাকিয়ে হারের দিকর তাকিয়ে আছেন। এতে তো তার মনে কষ্ট হচ্ছে! আমি তাদেরকে ঐ হারের কথা বিস্তারিত বললাম। তারা আমার কথা শুনে উচ্চস্বরে বলতে লাগলঃ লা -ইলাহা-ইল্লালাহ আল্লাহু আকবার।
আমি বললাম কি হল? তারা বলল ঐ বৃদ্ধ লোকটি যার হার তুমি পেয়েছিলে সে এই এতিম মেয়েটির পিতা ছিল।সে কখনো কখনো বলতঃ সারা দুনিয়ার মধ্যে আমি একজনকেই কামেল মুসলমান পেয়েছি আর সে হল ঐ ব্যক্তি যে মতির হার পেয়ে আমাকে ফেরত দিয়েছিল।তাই সে প্রায়ই তা দুআ'ই বলতঃ আমাকে এবং ঐ ব্যক্তিকে একত্রিত করে দাও যাতে করে আমি আমার কন্যাকে তার সাথে বিয়ে দিতে পারি।এখন নিঃসন্দেহে আল্লাহ তার মনোবাসনাকে পূরন করেছেন, তুমি নিজেই এখানে এসে পৌছেছ।
কাজী আবু বকর বলেন পরে আমি ঐ মেয়ের সাথে যে আমার স্ত্রী হল এককাল অতিক্রম করলাম।তার ঘরে দুজন সন্তান হল,শেষে সে মৃত্যুবরণ করল।ঐ হারটি আমার এবং দু সন্তানের মিরাসে(মালিকানায়)পরিনত হল।কিছুদিন পর আমার ঐ দুই বাচ্চাও আল্লাহর ডাকে সাড়া দিল।আর ঐ হারটি আমার মিরাস(মালিকানায়) হয়ে গেল।শেষে আমি সে হারটি একলক্ষ দিনারে বিক্রি করে দিলাম।
আজ যে সম্পদ তোমরা আমার কাছে দেখছ তা ঐ হারেরই বদৌলতে হয়েছে।
_______________________
এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছেঃ
আল বিদায়া-ওয়ান নিহায়াঃ৯/৬২১ 
হায়াতুস সাহাবাঃ৪/৫১৫
তারিখ তাবারিঃ৩/৩৩

No comments

Powered by Blogger.